Monday, March 19, 2012

আমেরিকা যাওআর কাহিনি ।

স্বপ্নের আমেরিকা: ১১ মাসের লোমহর্ষক ভ্রমণ কাহিনী পিডিএফ প্রিন্ট ইমেইল
নিরাপদ জীবন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে দালালকে ২২ লাখ টাকা দিয়ে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের মাহমুদুর রশীদ চৌধুরী (২৭) দীর্ঘ ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত জীবন পেলেন। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময় তাকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হয় কয়েক দফা এবং ট্রাকের পেছনে সোয়া হাত প্রশস্ত ও ৫ হাত উঁচু কফিনের মত বক্সে ১০জনকে শুইয়ে পাড়ি দিতে হয় ৩৬ ঘন্টার পথ। এর মধ্যে একবার মাত্র ট্রাক থামিয়ে পানি ও রুটি পরিবেশন করা হয়। তবে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় বিচরণের স্বাদ গ্রহনের পর মাহমুদুর রশীদ চৌধুরী অসহনীয় সে ভ্রমণ কাহিনীকে আর স্মরণ করতে চান না। কারণ, দেশে থাকলে এতদিনে হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ দিতে হতো। তবে এত বিপুল অর্থ ঢালার পরও জীবনের এমন ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন আমেরিকায় আসার চেষ্টা না করেন-সে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। টগবগে যুবক মাহমুদ চৌধুরী বার্তা সংস্থা এনাকে তার দুঃসহ স্মৃতিচারণকালে এক মুহূর্তের জন্যেও তাকে হাসতে দেখা যায়নি। সবসময় বিষন্নতায় আক্রান্ত ছিলেন। কন্ঠও ছিল একেবারেই নম্র। বিএনপির সোচ্চার একজন সংগঠক ছিলেন তা মনে হয়নি। মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি বেঁচে আচি-এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না। এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে ঢাকায় পলাতক জীবন-যাপনের সময় সন্ত্রাসীদের আতংক তাড়িয়ে ফিরিছে সারাক্ষণ। তাই জীবনটা বিষিয়ে উঠেছিল। দেশ ত্যাগের বিকল্প ছিল না বলেই ২২ লাখ টাকা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হই। ২০০৯ সালের ২৩ জুন ঢাকা ত্যাগ করি। নয়াদিল্লীতে পৌঁছার পর অপেক্ষা করি। দালালরা আমাকে বিভিন্ন পথে ইকুয়েডরে পাঠায়। মাসখানেক থাকি ঐ দেশে। সেখান থেকে আরো ১০ জনের সাথে আমাকে কলম্বিয়ায় পাঠানো হয়। কলম্বিয়ার রাজধানী বগোতায় রওয়ানা দেই মালবাহী ট্রেনে। পথিমধ্যে পুলিশ ঘেরাও করে । আমাদের ১১ জনকেই গভীর অরণ্যে নামিয়ে দেয়া হয়। আমরা রাস্তার নীতে গভীর গর্তে লুকিয়ে পড়ি। তখন বেলা ১২টা। অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। দালালরা আসেনি। অবশেষে অজানা-অচেনা পথে ৪/৫ মাইল হাঁটার পর একটি দোকান দেখতে পাই। দোকানদারকে অনুরোধ করি টেলিফোন দিতে। কিš' সে দেয়নি। এরপর আরেকটু হেঁটে আরেকটি দোকান পেলাম। তাকে সবকিছু খুলে বলার পর সেল ফোন দিল। দালালকে আমাদের অবস্থান জানানোর পর চলে এলো সে। সেখান থেকে দালালের নির্ধারিত বাসায় নেয়। রাত ৯টায় পুনরায় রওয়ানা দিলাম বগুতার উদ্দেশ্যে। বগুতার পথে কালিটা নামক ¯'ানে রাত ৩টায় পুলিশ আমাদের ধরে ফেলে। এর পরদিন আমাদেরকে জেলে পাঠায়। ৩ রাত ছিলাম জেলে। ঐ জেলে ঢুকানোর সময় কারারক্ষীরা আমার ৩টি সেল ফোন এবং নগদ কিছু ডলার কেড়ে নেয় অর্থাৎ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি। ঐ জেল থেকে দালালরাই মুক্ত করে। সে সময় আমি অনুরোধ করি ঢাকায় ফেরৎ পাঠানোর জন্য। কিন্তু সে অনুরোধ পাত্তা পায়নি। ৩ দিন পর আবারো বগুতায় পাঠায় আমাদেরকে। সেখানে একটি কাঠের বাড়িতে ১৫ দিন রাখা হয়। নির্জন মরুভূমি এলাকা ছিল সেটি। খাবার দেয়া হয় সামান্য। দৈনিক ২ গ্যালন পানি বরাদ্দ ছিল ১১ জনের জন্য। সেখান থেকে পানামায় নেয় জাহাজে। পানামা থেকে কোস্টারিকায় সড়ক পথে। কোস্টারিকা থেকে সারারাত পায়ে হেঁটে যেতে হয় নিকারাগুয়ায়। নিকারাগুয়ায় পৌঁছার পর আমাদের সংখ্যা বেড়ে ২০ হয়। এই ২০ জন প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ছোট-বড় খাল পাড়ি দেই। পথিমধ্যে পুলিশ এলে রাস্তার পার্শ্ববর্তি সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ি। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ টহল দেয়ায় আমাদের গাইড অর্থাৎ দালালও সটকে পড়ে। আমরা অনাহারে ঐ সুড়ঙ্গে রাত কাটাই। পরদিন দালাল এলো। সেখান থেকে আবারো কন্টেইনারে ভরে হন্ডুরাসে যাবার পথে হন্ডুরাস পুলিশ আমাদের ধরে ফেলে। ঘুষের বিনিময়ে মুক্ত করা হয় আমাদেরকে। এরপর গুয়াতেমালা সীমান্ত পাড়ি দেই খাল সাঁতরিয়ে এবং মেক্সিকোতে প্রবেশ করি এ বছরের ফেব্র“য়ারির ২৭ তারিখে। শুরু হয় চূড়ান্ত প্র¯'তি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকার। তাপাসুলা সিটি থেকে একটি মালবাহী ট্রাকে আমাদের ১০ জনকে উঠানো হয়। এবার চরম পরীক্ষার মুখোমুখী হই। ট্রাকের পেছনে সোয়া হাত প্রশস্ত এবং ৫ হাত উঁচু কফিনের মত একটি বাক্সে আমাদেরকে শুয়ে পড়তে হয় অর্থাৎ একজনের উপর আরেকজন শুয়ে ১২ ঘন্টা পর বিরতি দিয়ে ৩৬ ঘন্টা অতিবাহিত করি। দিন-রাত ট্রাকে লাশের মত পড়ে থেকে একদিন ভোরে মেক্সিকো সিটিতে আমাদের নামানো হয়। সেখান থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে একটি ভাঙ্গা বাড়িতে রাখা হয় ১০/১২ দিন। ১৮ মার্চ রাত ১২টায় মেক্সিকো সিটির নিকটবর্তি সীমান্তে একটি নদী পাড়ি দিলাম সাঁতরিয়ে। কিন্তু রক্ষা নেই। চারদিক থেকে পুলিশ আমাদের ঘেরাও করলো। উপায় না দেখে প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতে লাফিয়ে পড়ি আবারো। অনেকক্ষণ সাঁতরানোর পর অপর পাড়ে উঠি। তখন রাত ১২টা। ভেজা কাপড়েই হাঁটতে হয় গভীর অরণ্যে অচেনা পথ ধরে। তবে গাইড ছিল সাথে। এ যাত্রায়ও আমাদের ১০ জনকে পিকআপ ভ্যানের বাক্সে ঢুকায়। সেটিও কফিনের মতই। সে সময় বুঝতে পারিনি যে আমরা টেক্সাসে এসেছি। গভীর জঙ্গলে পিকআপ থেকে নামিয়ে আমাদেরকে হাঁটতে বলে। ২ দিন, ২ রাত হাঁটার পর শরীর আর চলছিল না। খাবারও দেয়া হয়নি ঠিকমত। সে সময় জানতে পারি আমাদের টিমে নাসের নামক আরেক বাংলাদেশী রয়েছেন, তার বাড়িও নোয়াখালিতেই। নাসেরের সাহায্য চাইলে সে এগিয়ে আসে। কি¯' তারও শরীরে জোর ছিল না। অবশেষে আমি পথিমধ্যে নিস্তেজ হড়ে পড়লে গাইডসহ সকলে আমাকে ফেলেই চলে যায়। মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সে সময়টি ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী কস্টের এবং বেদনার। নাসেরের কাছে একটু পানি ছিল, তা আমাকে দেয় এবং সেটি ছিল আমার বেঁচে থাকার শেষ ভরসা। এক পর্যায়ে জীবন বাজি রেখে গাড়ির চাকার চিহ্ন ধরে হাঁটতে চেষ্টা করি। হেলপ হেলপ বলে চিৎকার করি। আমার চিৎকার আকাশে উড়ে যায়। রাতের গভীরতা যত বাড়ে তত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। জঙ্গলের হিংস্র প্রাণীদের বিচরণ বুঝতে পেরে সীমান্ত রক্ষীদের পরিত্যক্ত একটি টহল বক্সে ঢুকে পড়ি। এভাবে কাটে ২দিন। হাঁটতে হাঁটতে একটি ডোবা দেখে সেখানে নেমে পানির পিপাসা মেটাই। পরদিন বেলা ২টায় একটি গাড়ির আওয়াজ শুনে রাস্তায় উঠে আসি। হাত উঠিয়ে তাকে থামতে বলি। কিন্তু গাড়িটি আমাকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। আমি সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকি পরবর্তি গাড়ির জন্য। রাত ৮টায় এলো পুলিশের গাড়ি এবং তারা আমাকে গ্রেফতার করার পরই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। চৈতন্য ফিরে পাবার পর দেখলাম আমাকে হাসপাতালে বেডে সেলাইন দেয়া হচ্ছে। জানানো হলো যে আমি টেক্সাসে রয়েছি। অনুবাদক সংগ্রহ করা হলো টেলিফোনে। সবকিছু বলার পর আমাকে প্রেরণ করা হলো ডিটেনশন সেন্টারে। টেক্সাসের পর্টিসাবেলের ডিটেনশন সেন্টারে অন্ধকার কক্ষে আমাকে রাখা হয়। সেখান থেকেই টেলিফোনে যোগাযোগ করি নিউইয়র্কে ঘনিষ্ঠ একজনের সাথে। এরপর ২৯ মে আমাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছি। মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আনার অঙ্গিকার করেছিল দালালরা। কিন্তু তারা সে অঙ্গিকার পূরণে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়াও হয়। তিনি বলেন, ঢাকায় পুরাতন এয়ারপোর্ট এলাকায় অফিস রয়েছে এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি এ পথে পাড়ি জমিয়েছিলাম। এর আগে আরো কয়েকজনকে টাকা দিয়েছি। তারা কাজ করতে পারেনি, টাকাও ফেরৎ দেয়নি। ৬ ভাই, ২ বোনের মেঝ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরী। তা না হলে আমার মত অসংখ্য মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাংলাদেশ ছাড়তে হবে।<embed id="pingboxb03ko80vra0WW" type="application/x-shockwave-flash" src="http://wgweb.msg.yahoo.com/badge/Pingbox.swf" width="220" height="400" flashvars="wid=HwoWbO6pSmP5.0M_GkXkj3p_nSo-" allowScriptAccess="always" />

No comments:

Post a Comment